হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং মুসলমানদের বিশ্ব সম্মিলন। সামর্থ্যবানদের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। যাদের বায়তুল্লাহ শরিফে গমনাগমনের, হজের যাবতীয় খরচ বহনের এবং এই সময়ে পরিবারের ভরণ-পোষণের সামর্থ্য রয়েছে তাদের ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে।
হজের ফরজ
১. হজের নিয়ত করে হজের পোশাক (সেলাইবিহীন দুই প্রস্থ সাদা কাপড় পুরুষদের জন্য) পরিধান করা ও তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক লা শারীকা লাক। তালবিয়াটি আরবি থেকে শুদ্ধ করে শিখতে হবে) একবার পড়া। একে ইহরাম বলে।
২. ৯ জিলহজ আরাফায় অবস্থান করা (কিছু সময়ের জন্য হলেও)। যদি কোনো কারণে হাজি ৯ জিলহজের দিনে অথবা রাতে আরাফাতে পৌঁছতে না পারেন, তাহলে তার হজ হবে না।
৩. জিয়ারতের তাওয়াফ বা ফরজ তাওয়াফের প্রথম চার চক্কর ফরজ, বাকি তিন চক্কর ওয়াজিব। এ তাওয়াফ ১০ জিলহজ করতে হয়। ১১-১২ তারিখেও এ তাওয়াফ করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
৪. ফরজগুলো নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্ধারিত ক্রমানুসারে আদায় করা।
এই চারটি ফরজের কোনো একটি বাদ পড়লে হজ হবে না।
হজের ওয়াজিব
১. সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে দ্রুত চলা। বর্তমানকালে হাজিদের সুবিধার জন্য এ পথের মাঝে খুব সহজে চোখে পড়ার মতো মাথার ডানে-বামে ও পরে সবুজ বাতির দুটি বেষ্টনি আছে। এই দুই বর্ডার লাইনের মধ্যে দৌড়ালেই ওয়াজিব আদায় হবে। সাফা-মারওয়ার মধ্যবর্তী বাকি অংশে হেঁটে চলতে দোষ নেই। এ দ্রুত চলাকে ‘সায়ি’ বলে।
২. মুজদালিফায় অবস্থান করা। ৯ জিলহজ (আরাফাতে অবস্থানের দিন) দিবাগত রাতের যে কোনো সময় সেখানে পৌঁছানো এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে কিছু সময় অবস্থান করা।
৩. শয়তানের স্তম্ভে (জামরাতে) পাথর মারা। একে ‘রামি’ বলে।
৪. মক্কা শরিফের চারদিকে ইহরাম বাঁধার যে নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে, সেই পরিসীমার বাইরে যারা অবস্থান করে তাদের জন্য মক্কা শরিফে প্রবেশ করার পর সর্বপ্রথম কাবার তওয়াফ করা। বাংলাদেশি হাজিদের জন্য এ তাওয়াফ ওয়াজিব। এ প্রাথমিক তাওয়াফকে ‘তাওয়াফে কুদুম’ বলে।
৫. বিদায়ী তাওয়াফ করা। কাবা থেকে শেষ বিদায়ের সময় (হজ থেকে ফেরার দিন) তাওয়াফ করা। এটা বহিরাগতদের জন্য ওয়াজিব, কাজেই এ দেশি হাজিদের এ তাওয়াফ ওয়াজিব।
৬. মাথা মুড়ানো বা চুল ছাঁটা। হজের আরকান শেষ করার পর মাথা মুড়িয়ে ফেলা অথবা চুল ছাঁটা। ১০ জিলহজ শয়তানের বড় স্তম্ভে (জামরাতে আকাবায়) পাথর মারার পর মাথা মুড়িয়ে ফেলা বা চুল ছোট করা।
৭. কুরবানি করা। বহিরাগত হাজিদের জন্য এটা ওয়াজিব।
৮. দুই নামাজ একত্রে পড়া। অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে জোহর-আছর একত্রে এবং মুজদালিফায় মাগরিব-ইশা একত্রে পড়া ওয়াজিব।
৯. পাথর মারা, কুরবানি ও মাথা মুড়ানো ক্রমানুসারে করা (কুরবানি ও মাথা মুড়ানোর ক্রমধারা লঙ্ঘিত হলেও হজ হয়ে যাবে বলে অনেক ইসলামি বিশেষজ্ঞ অভিমত ব্যক্ত করেছেন)।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।